মেঘের প্রাসাদের যাত্রা
অধ্যায় ১: রহস্যময় মানচিত্র
উইলোব্রুক গ্রামে, পাহাড় এবং ঘন বনাঞ্চলের মাঝে, এক কৌতূহলী মেয়ে এলারা বাস করত। সে তার দিনগুলি বনে ঘুরে বেড়ানো, অদ্ভুত পাথর সংগ্রহ করা এবং তার ছোট্ট গ্রামের বাইরে অ্যাডভেঞ্চারের স্বপ্ন দেখে কাটাত। তার বাবা-মা, যারা উভয়েই তাঁতি, প্রায়ই তার উচ্ছ্বল কল্পনার জন্য তাকে নিয়ে মজা করতেন। কিন্তু এলারা জানত যে পৃথিবীতে চোখে দেখা জিনিসের চেয়ে অনেক বেশি কিছু আছে।
একটি বৃষ্টির দুপুরে, যখন সে তার দাদীর আটিকায় পুরনো জিনিসপত্র খুঁজছিল, এলারা একটি ধুলোয় মোড়া সিন্দুক পেয়ে যায়। ভিতরে সে একটি অদ্ভুত মানচিত্র খুঁজে পায়। এটি এমন একটি উপাদান দিয়ে তৈরি ছিল যা সিল্কের মতো মনে হচ্ছিল কিন্তু তার চেয়েও বেশি চকচক করছিল। মানচিত্রে আকাশে ভাসমান একটি প্রাসাদের দিকে যাওয়ার পথ দেখানো ছিল, যেটি মেঘে ঘেরা। নীচে, একটি সুন্দর হাতের লেখায় লেখা ছিল: “সাহসী এবং কৌতূহলীদের জন্য, মেঘের প্রাসাদ অপেক্ষা করছে।”
এলারার হৃদয় দ্রুত স্পন্দিত হতে লাগল। সে সবসময় কিছু জাদুকরী খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন দেখত, এবং এই মানচিত্রটি তার অ্যাডভেঞ্চারের টিকিট। সে একটি ছোট ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র—একটি রুটি, পানির ফ্লাস্ক, তার বিশ্বস্ত কম্পাস এবং মানচিত্র—প্যাক করে ভোরবেলা রওনা দিল।
অধ্যায় ২: ফিসফিস করা বন
তার যাত্রার প্রথম অংশ তাকে নিয়ে গেল ফিসফিস করা বনের মধ্যে, একটি অরণ্য যা তার ভয়ানক শব্দ এবং রহস্যময় প্রাণীদের জন্য পরিচিত। এলারা যত গভীরে প্রবেশ করছিল, গাছগুলি যেন কাছাকাছি ঝুঁকে আসছিল, তাদের ডালপালা সূর্যের আলো আটকে দিচ্ছিল। বাতাসে অদ্ভুত ফিসফিস শব্দ ভেসে আসছিল, যেন বন নিজেই জীবন্ত।
হঠাৎ, তার সামনে একটি ছোট, আলোকিত প্রাণী আবির্ভূত হল। এটি একটি জোনাকি পোকা ছিল, কিন্তু সে আগে কখনও এমন দেখেনি। এর আলো ফিসফিস শব্দের সাথে তাল মিলিয়ে জ্বলছিল। জোনাকিটি তাকে একটি খোলা জায়গায় নিয়ে গেল যেখানে একটি প্রাচীন গাছ দাঁড়িয়ে ছিল, যার বাকলে মানচিত্রের মতোই প্রতীক খোদাই করা ছিল।
“শুধুমাত্র পবিত্র হৃদয়ের মানুষই এখান দিয়ে যেতে পারবে,” গাছটি যেন বলল, তার কণ্ঠস্বর এলারার মনে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। এলারা গাছের উপর হাত রাখল, এবং প্রতীকগুলি উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে লাগল। সামনের পথ পরিষ্কার হয়ে গেল, এবং ফিসফিস শব্দ মিলিয়ে গেল। সে জোনাকিটিকে ধন্যবাদ জানাল, যা খুশিতে গুঞ্জন করতে করতে বনের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।
অধ্যায় ৩: প্রতিচ্ছবির নদী
বনের বাইরে, এলারা পৌঁছাল প্রতিচ্ছবির নদীর কাছে। পানি এতই স্থির ছিল যে এটি কাঁচের মতো দেখাচ্ছিল, আকাশের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠছিল। মানচিত্র অনুসারে, তাকে যাত্রা চালিয়ে যেতে নদী পার হতে হবে। কিন্তু কোথাও কোনো সেতু দেখা যাচ্ছিল না।
যখন সে তার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে চিন্তা করছিল, পানির মধ্যে থেকে একটি মূর্তি আবির্ভূত হল—একজন মহিলা যার শরীর সম্পূর্ণ তরল দিয়ে তৈরি, তার রূপ সূর্যের আলোয় ঝলমল করছিল। “নদী পার হতে চাইলে তোমাকে তোমার প্রতিচ্ছবির মুখোমুখি হতে হবে,” জলদেবী বললেন। “শুধুমাত্র যারা নিজেকে বোঝে, তারাই পার হতে পারবে।”
এলারা পানির উপর পা রাখল, যা তার ওজনকে মাটির মতোই ধরে রাখল। যখন সে হাঁটতে লাগল, তার প্রতিচ্ছবি পরিবর্তিত হতে শুরু করল, তার ভয়, সন্দেহ এবং স্বপ্নগুলি দেখাতে লাগল। সে নিজেকে একটি শিশু, একজন অ্যাডভেঞ্চারার এবং একজন নেতা হিসাবে দেখতে পেল। যখন সে নদীর অপর পাড়ে পৌঁছাল, সে নিজের মধ্যে একটি নতুন আত্মবিশ্বাস অনুভব করল। জলদেবী হাসলেন এবং পানির নীচে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
অধ্যায় ৪: বাতাসের পাহাড়
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিল বাতাসের পাহাড়, একটি উঁচু শিখর যেখানে বাতাসের ঝাপটা বুনো ঘোড়ার মতো ঘুরছিল। মানচিত্রে সতর্ক করা হয়েছিল যে শুধুমাত্র যারা বাতাসকে বশ করতে পারবে, তারাই শীর্ষে পৌঁছাতে পারবে। এলারা তার আরোহণ শুরু করল, কিন্তু বাতাস তাকে প্রতিটি পদক্ষেপে পিছনে ঠেলে দিচ্ছিল।
তার দাদীর গল্প মনে পড়ল, যেখানে তিনি সঙ্গীতের শক্তির কথা বলতেন। এলারা তার ব্যাগ থেকে একটি ছোট বাঁশি বের করল। সে একটি মিষ্টি সুর বাজাল, এবং বাতাস ধীরে ধীরে শান্ত হতে শুরু করল, সুরের সাথে তাল মিলিয়ে দোল খেতে লাগল। যখন সে বাজাল, বাতাস তাকে স gentle gently তুলে নিয়ে পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছে দিল।
শীর্ষ থেকে, সে প্রথমবারের মতো মেঘের প্রাসাদ দেখতে পেল। এটি আকাশে ভাসছিল, তার চূড়াগুলি আকাশকে ছুঁয়ে ফেলছিল। একটি রংধনু সেতু পাহাড়কে প্রাসাদের সাথে যুক্ত করেছিল, এবং এলারা জানত যে তার যাত্রা শেষের দিকে।
অধ্যায় ৫: মেঘের প্রাসাদ
রংধনু সেতু পার হয়ে, এলারা মেঘের প্রাসাদে প্রবেশ করল। ভিতরে, বাতাস ফুলের সুগন্ধে ভরপুর ছিল, এবং দেয়ালগুলি হীরের মতো চকচক করছিল। একজন বৃদ্ধ লোক তাকে অপেক্ষা করছিলেন—তার দীর্ঘ, প্রবাহিত দাড়ি এবং তার চোখগুলি যেন তারার মতো জ্বলছিল।
“স্বাগতম, এলারা,” তিনি বললেন। “তুমি নিজেকে সাহসী, পবিত্র হৃদয়ের এবং আত্মবিশ্বাসী হিসেবে প্রমাণ করেছ। মেঘের প্রাসাদ হল স্বপ্নের জায়গা, যেখানে অসম্ভব সম্ভব হয়ে ওঠে। তুমি কী চাও?”
এলারা কিছুক্ষণ ভাবল। “আমি জ্ঞান চাই,” সে বলল। “আমি বিশ্বের রহস্যগুলি বুঝতে চাই এবং সেগুলি অন্যদের সাথে শেয়ার করতে চাই।”
বৃদ্ধ লোকটি হাসলেন। “তাহলে তুমি তা পাবে।” তিনি তাকে একটি বই দিলেন যা একটি নরম আলোয় জ্বলছিল। “এটি হল বিস্ময়ের বই। এতে মহাবিশ্বের রহস্য রয়েছে। এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করো।”
অধ্যায় ৬: বাড়ি ফেরা
বিস্ময়ের বই হাতে নিয়ে, এলারা উইলোব্রুকে ফিরে এল। গ্রামবাসীরা তার গল্প এবং সে যে জ্ঞান নিয়ে এসেছে তা দেখে অবাক হয়ে গেল। সে বইটি ব্যবহার করে তার সম্প্রদায়কে সাহায্য করল, তাদের নতুন উপায়ে চাষাবাদ, নির্মাণ এবং চিকিৎসা শিখাল।
যদিও সে কখনও মেঘের প্রাসাদে ফিরে যায়নি, এলারা প্রায়ই মানচিত্রের দিকে তাকিয়ে তার যাত্রার কথা মনে করত। সে জানত যে প্রাসাদটি সর্বদা সেখানে আছে, পরবর্তী সাহসী ব্যক্তির জন্য অপেক্ষা করছে যারা তাদের নিজস্ব অ্যাডভেঞ্চারে বের হবে।