Story for Kids in Bangla | বাচ্চাদের জন্য গল্প । বাঘের ভালোবাসার সন্ধান

1.  বাঘের ভালোবাসার সন্ধান | 


জঙ্গলের মাঝখানে, রাজা নামে এক শক্তিশালী বাঘ বাস করত। তার ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী থাবা, সবচেয়ে ধারালো দাঁত, আর সবচেয়ে গম্ভীর গর্জন। কিন্তু এত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, রাজা একাকী অনুভব করত। সে এক বন্ধুর খোঁজ করছিল, যে তাকে ভালোবাসবে।

একদিন সকালে, রাজা এক যাত্রা শুরু করল—খাবারের জন্য নয়, বরং ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের সন্ধানে। সে জঙ্গলে ঘুরছিল, সূর্যের আলোয় তার সোনালি লোম ঝলমল করছিল। সে নদীর ধারে থামল, যেখানে কিছু বানর খেলছিল।

"নমস্কার, ছোট বন্ধুরা!" রাজা বিনয়ের সঙ্গে ডাক দিল। "তোমরা কি আমার বন্ধু হতে চাও?"

বানররা হাসতে লাগল আর মাথা নাড়ল। "ওহ রাজা! তুমি অনেক বড় আর ভয়ঙ্কর। আমরা খুব ছোট তোমার সঙ্গে খেলার জন্য।"


হতাশ হয়ে, রাজা আবার চলতে লাগল। কিছুক্ষণ পর, সে এক জ্ঞানী হাতি, ভোলার সঙ্গে দেখা করল।

"ভোলা, আমি ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের সন্ধানে আছি। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?" রাজা আশা নিয়ে জিজ্ঞেস করল।

হাতি মৃদু হাসল আর বলল, "ভালোবাসা খোঁজা যায় না, প্রিয় রাজা। এটা কেবল দয়া আর ধৈর্যের মাধ্যমে পাওয়া যায়। অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করো, ভালোবাসা আপনাআপনি তোমার কাছে আসবে।"

রাজা ভোলার কথা চিন্তা করতে লাগল, এমন সময় হঠাৎ সে আতঙ্কিত এক চিৎকার শুনল। দৌড়ে গিয়ে দেখল, এক ছোট হরিণ কাঁটার ঝোপে আটকে আছে।

"ভয় পেও না! আমি তোমাকে সাহায্য করব," রাজা কোমল কণ্ঠে বলল। সে সতর্কতার সঙ্গে কাঁটাগুলো সরিয়ে দিল আর হরিণটাকে মুক্ত করল।

"ধন্যবাদ, রাজা! তুমি খুবই দয়ালু!" হরিণটি কৃতজ্ঞতায় বলল।

রাজা তার যাত্রা অব্যাহত রাখল এবং এক পথভোলা পাখিকে বাসায় ফেরার পথ দেখিয়ে দিল, এক খরগোশ পরিবারকে ঝড় থেকে রক্ষা করল, আর এক ক্ষুধার্ত কাঠবিড়ালির সঙ্গে নিজের খাবার ভাগ করে নিল।

এক সন্ধ্যায়, রাজা এক বড় গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিল, তখন অনেক কণ্ঠ তার নাম ধরে ডাকতে লাগল। "রাজা! রাজা!"

সে চোখ তুলে দেখল, বানর, হরিণ, পাখি, খরগোশ, আর ভোলা হাতিও উপস্থিত! সবাই হাসিমুখে তাকে ঘিরে ধরল।


"আমরা তোমাকে দেখতে এসেছি, রাজা," ভোলা বলল। "তুমি আমাদের সবাইকে সাহায্য করেছ, আর আমরা তোমাকে তোমার দয়ার জন্য ভালোবাসি।"

রাজার হৃদয় আনন্দে ভরে উঠল। সে বুঝতে পারল, ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব খোঁজার কিছু নয়, এটা কেবল অন্যদের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে পাওয়া যায়।

সেই দিন থেকে, রাজা কখনো একাকী অনুভব করল না। সে ভালোবাসা খুঁজে পেল সবচেয়ে সুন্দর উপায়ে—দয়া ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে।

এভাবেই, সেই শক্তিশালী বাঘ, যে একসময় ভালোবাসার সন্ধান করত, পুরো জঙ্গলের সবচেয়ে ভালোবাসার প্রাণীতে পরিণত হল।



2. সাহসী ছোট্ট বাঘ

সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে রোরো নামে একটি ছোট্ট বাঘের শাবক তার মা ও ভাইবোনদের সাথে বাস করত। রোরো ছিল সবচেয়ে ছোট, কিন্তু সে খুব কৌতূহলী এবং সাহসী ছিল। তার ভাইবোনরা যখন গুহার কাছে খেলত, তখন রোরো সবসময় জঙ্গলের আশপাশ ঘুরে দেখতে চাইত।

একদিন, ঘুরতে ঘুরতে রোরো দেখল কিছু হরিণ নদীর ধারে জল খাচ্ছে। সে লুকিয়ে পড়ল, ঠিক যেমন তার মা শিকার করার সময় করত। কিন্তু ঠিক তখনই এক গর্জন শুনে সে থমকে গেল। সেটা ছিল এক বড়, ভয়ঙ্কর চিতা! হরিণগুলো দৌড়ে পালিয়ে গেল, আর রোরো ভয়ে জমে গেল।

চিতাটি রোরোকে দেখে এগিয়ে এল। রোরো পালাতে চাইল, কিন্তু তখনই তার মায়ের কথা মনে পড়ল: "একজন বাঘকে সবসময় সাহসী হতে হবে।" সে বুক ফুলিয়ে ছোট্ট একটা গর্জন দিল। চিতাটি হেসে উঠল, কিন্তু ঠিক তখনই রোরোর মা প্রচণ্ড গর্জন করে সেখানে উপস্থিত হলেন।

চিতাটি জানত যে সে পূর্ণবয়স্ক বাঘের সাথে লড়তে পারবে না, তাই সে দ্রুত পালিয়ে গেল। রোরোর মা তাকে আদর করে বললেন, "তুমি সাহসী ছিলে, আমার ছোট্ট বাঘ, কিন্তু জঙ্গল খুব বিপজ্জনক। সবসময় পরিবারের কাছে থাকো।"

সেই দিন রোরো বুঝতে পারল যে সাহস থাকা ভালো, কিন্তু নিজের নিরাপত্তাও বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ধীরে ধীরে সে বড় হয়ে এক বুদ্ধিমান এবং শক্তিশালী বাঘ হয়ে উঠল।


3. দয়ালু বাঘ ও পথ হারানো বানর

এক গভীর জঙ্গলে রাজা নামে এক দয়ালু বাঘ বাস করত। অন্যান্য বাঘদের মতো সে ছোট প্রাণীদের শিকার করত না, বরং সবাইকে সাহায্য করত।

একদিন, ছোট্ট বানর মোমো তার বন্ধুদের সাথে খেলতে খেলতে পথ হারিয়ে ফেলল। সে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে লাগল, কিন্তু ভুল করে বাঘ রাজার এলাকায় ঢুকে পড়ল। রাজাকে দেখে সে ভয়ে কাঁপতে লাগল।

"মহান বাঘ, আমাকে খেয়ে ফেলবেন না!" মোমো কাঁদতে কাঁদতে বলল।

রাজা হেসে বলল, "আমি পথ হারানো প্রাণীদের খাই না। তুমি এখানে কী করছো, ছোট্ট বন্ধু?"

মোমো জানাল যে সে নিজের দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রাজা দয়ালু মন নিয়ে বলল, "আমার পিঠে চড়ো, আমি তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেব।"

মোমো একটু দ্বিধা করল, কিন্তু শেষে রাজার পিঠে উঠে পড়ল। রাজা ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগল, মাঝে মাঝে তার লেজ নাড়ছিল, যা দেখে মোমো হেসে উঠল।

অবশেষে তারা বানরদের দলের কাছে পৌঁছালো।

"মোমো! তুমি ঠিক আছো!" তার মা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। অন্য বানররাও রাজাকে ধন্যবাদ জানাল তার মহৎ হৃদয়ের জন্য।

সেই দিন থেকে জঙ্গলের প্রাণীরা রাজাকে ভয় পাওয়া বন্ধ করল। বরং, তারা তাকে ভালোবাসতে ও সম্মান করতে লাগল।


4. জাদুকরী ডোরার বাঘ টিগো

এক জাদুকরী জঙ্গলে টিগো নামে একটি বিশেষ বাঘ ছিল। অন্য বাঘদের মতো তার শুধু কালো ডোরা ছিল না, বরং তার ডোরাগুলো মনের অবস্থার সাথে সাথে রং পরিবর্তন করত! যখন সে খুশি থাকত, তার ডোরা সোনালী হয়ে যেত। যখন সে দুঃখী থাকত, তখন তা ধূসর হয়ে যেত।

একদিন, ছোট্ট খরগোশ লিলা কাঁদতে কাঁদতে টিগোর কাছে এল।

"আমাদের গ্রামে পানি নেই, আমরা খুব কষ্টে আছি," লিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল।

টিগোর ডোরাগুলো নীল হয়ে গেল, যা তার দুঃখ বোঝাচ্ছিল। "আমি সাহায্য করব!" সে দৃঢ় কণ্ঠে বলল।

সে জঙ্গলের বুদ্ধিমান পেঁচার কাছে গেল। পেঁচা বলল, "একটি গোপন নদী আছে, কিন্তু সেটি কাঁটাঝোপ দিয়ে ঘেরা।"

টিগো বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে তার শক্তিশালী থাবা দিয়ে কাঁটাঝোপ ভেঙে ফেলল। হঠাৎ করে পানির প্রবাহ শুরু হয়ে গেল, যা খরগোশদের গ্রামে পৌঁছে গেল।

লিলা ও তার পরিবার খুশিতে নেচে উঠল, আর টিগোর ডোরাগুলো আবার সোনালী হয়ে গেল।

সেই দিন থেকে, টিগো পুরো জঙ্গলের নায়ক হয়ে গেল। সবাই বুঝতে পারল, সত্যিকারের জাদু হলো দয়া ও ভালোবাসা!

Post a Comment

Previous Post Next Post